পুলিশ যখন মানবিক পুলিশ

গল্পটি লিখতাম না। কিন্তু আমার বিবেক আমাকে লিখতে বাধ্য করাচ্ছে। দুজন স্বেচ্ছাসেবক রক্ত দেয়ার জন্য রংপুরে গিয়েছিল। রক্তদান করে ফুলবাড়ী ফিরতে রাত সাড়ে এগারোটা বেজে গেছে। তাদের দুজনেরই বাড়ি এখান থেকে ৯ কিলোমিটার দূরে। 

প্রচুর বৃষ্টির কারণে বাজার তখন একদম জনশূন্য। ছাতা না থাকায় আমিও বৃষ্টিতে আটকা পড়ে মিডিয়া সেন্টার নামক অফিস রুমটিতে একা বসে আছি। বাজার থেকে মাঝেমধ্যে গার্ডের বাঁশির আওয়াজ আসছে। এমন সময় হঠাৎ একটি অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন। ওপাশ থেকে একজন বলছে, ভাই আমি লিখন। তখন মনে পড়লো এরা দুজন তো রংপুরে গিয়েছিল রক্ত দিতে। আমি তখনও আছি শুনে দুজনে কাকভেজা হয়ে ছুটে আসলো আমার অফিস রুমে। গামছাটা এগিয়ে দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখি প্রচুর বেগে বৃষ্টি হচ্ছে। 

বৃষ্টির বেগ কমতে রাত ১টা বেজে গেল। তাদেরকে থাকার জন্য অনেক করে বলা হলেও থাকতে নারাজ। থাকতে চাইবেই বা কি করে। আমি নিজেই তখনও বাড়ি ফেরা নিয়ে শঙ্কায়। বাইরে হালকা বৃষ্টি পড়তেছিল। বাজারের রাস্তার পাশে একটা দোকানের বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম। দেখি কোনো যানবাহন পাওয়া যায় কি না। বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পরও কোনো যানবাহন পাওয়া গেল না। এমন সময় একটা পুলিশের ভ্যান এসে দাঁড়ালো আমাদের থেকে একটু দূরে। আমি ভিজেই তাদের কাছে গিয়ে ঘটনাটা বললাম। তখন সেখানে থাকা একজন অফিসার ছাতা নিয়ে আসলেন। 

তিনি জানালেন জরুরী টহল থাকায় আমাদের গাড়িটা সেখানে পাঠানো হচ্ছে। তা না হলে আমরাই পৌঁছে দিয়ে আসতাম। তবুও চিন্তা করবেন না। আমি বাজারে ঘুরে দেখি কোনো গাড়ি পাই কি না। গাড়ি না পেলেও তাদের পৌঁছানোর ব্যবস্থা হবে। এই কথা বলে তিনি কোথায় যেন চলে গেলেন। তার একটু পরই আমরা একটা অটো পেলাম। সেটা ভারা করে দুজনকেই পাঠিয়ে দেয়ার ৭/৮ মিনিট পরই দেখি ওই অফিসার একটি অটো‌ নিয়ে আসলো। তখন আমি ওনাকে কি বলবো তা ভেবে পাচ্ছিলাম না। তিনি গাড়ি পাওয়ার কথা শুনে খুশি হলেন।

আসলেই তিনি যে আমাদের জন্য যানবাহন খুঁজে নিয়ে আসবেন তা ছিল আমার জন্য কল্পনা। এই কল্পনাকে যখন বাস্তবে রূপ দিলেন   তখন হৃদয় থেকে ভালোবাসা চলে আসলো তার প্রতি। নিয়ে আসা ওই অটোতে আমার সেই দুজনকে উঠাতে না পারলেও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। কেননা, যে কেউ চাইবে না এই গভীর রাতে বৃষ্টির মধ্যে একটা অটো খুঁজে আনতে। আমার কাছে এই মানবিক দৃশ্যটুকু ভুলবার মতো নয়। নামটা দেখেছিলাম মোয়াজ্জেম। তিনি কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী থানায় কর্মরত। বাংলাদেশ পুলিশের এরকম সকল মানবিক পুলিশকে স্যালুট জানাই। 

Comments

Popular posts from this blog

সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের ৫ম মৃত্যু বার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি